
শিরক : শিরক অর্থ হলো আল্লাহর সঙ্গে সত্তা, গুণ ও ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক বা অংশীদার করা। শিরক কবিরা গুনাহ। এ কারণে কবরে শাস্তি হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৭২)
মুনাফিকি : মুনাফিক অর্থ প্রতারক বা ‘ভণ্ড ধার্মিক’ ব্যক্তি। যে মুখে ইসলাম প্রকাশ করে, কিন্তু অন্তরে কুফরি বা ইসলামের প্রতি অবিশ্বাস লালন করে। আর এ ধরনের প্রতারণাকে বলা হয় নিফাক। মুনাফিকরা ভণ্ড, কপট ও ধোঁকাবাজ স্বভাবের হয়।
মুনাফিকি আচরণ ঈমানের আলো নির্বাপিত করে দেয়। মুনাফিকি স্বভাবের ব্যক্তিরা কবরে শাস্তি পাবে। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে আল্লাহতায়ালা মুনাফিক নারী ও পুরুষদের নিশ্চিত জাহান্নামি ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফেরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটিই তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদের অভিশাপ করেছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৬৮)
নামাজ আদায় না করা: প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। নামাজ আদায় না করার কারণে কবরে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। কবরে বেনামাজির শাস্তি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘কবরে একজন ফেরেশতা মোতায়েন করা হবে। যদি কোনো ব্যক্তি দুনিয়াতে জোহরের নামাজ কাজা করে থাকে, তা হলে সে তাকে লৌহদণ্ড দিয়ে আসরের সময় পর্যন্ত মারতে থাকবে। যদি আসরের নামাজ কাজা করে থাকে, তা হলে সেই ফেরেশতা তাকে মাগরিব পর্যন্ত প্রহার করতে থাকবে। এভাবে মাগরিবের নামাজ কাজা হলে এশা পর্যন্ত, এশার নামাজ কাজা করলে সকাল পর্যন্ত। আর ফজরের নামাজ কাজা হলে জোহরের সময় পর্যন্ত ফেরেশতা তাকে লৌহদণ্ড দিয়ে পেটাতে থাকবে। সেই ফেরেশতা যখন তাকে লৌহদণ্ড দিয়ে আঘাত করবে, তখন ওই ব্যক্তি আঘাতের তীব্রতায় কবরের ভেতর ৭০ হাত পর্যন্ত মাটির নিচে ঢুকে যাবে। এরপর আবার বেরিয়ে আসবে, ফেরেশতা পুনরায় আঘাত করবে। এভাবে সে পেটাতে থাকবে। সে সময় ওই ব্যক্তি চিৎকার করতে থাকবে। প্রচণ্ড ব্যথায় কঁকিয়ে উঠবে, চেঁচামেচি করবে। কিন্তু তার আর্তচিৎকার কেউ শুনবে না। তার কোনো বোন পাশে এসে দাঁড়াবে না। মা কাছে থাকবে না। কোনো ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। দুঃখগুলো ভাগ করার মতো কোনো সমব্যথী কাছে থাকবে না। সেখানে শুধু এক ফেরেশতা থাকবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নির্দেশ আসবে, সে শুধু তাই পালন করবে।’ (অনিবার্য মৃত্যুর প্রস্তুতি, মাওলানা জুলফিকার আহমদ নকশাবন্দ
গিবত বা পরনিন্দা করা: ইসলামে গিবত খুবই জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজ। গিবত করা কবিরা গুনাহ। গিবতের কারণে গিবতকারীকে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের তেমন কোনো বড় গুনাহের কারণে এ শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। এদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে গিবত করার কারণে এবং অন্যজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে প্রস্রাব করার পর উত্তমরূপে পবিত্র না হওয়ার কারণে…।’ (বুখারি, হাদিস: ২১৮)
প্রস্রাবের পর পবিত্রতা অর্জনে অবহেলা: প্রাকৃতিক প্রয়োজনে প্রতিদিন একজন মানুষকে বেশ কয়েকবার প্রস্রাব করতে হয়। আর প্রস্রাব করার পর প্রত্যেকবার পবিত্রতা অর্জন করা জরুরি। অথচ এক্ষেত্রে অনেকে অবহেলা করে থাকে। প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন না করার কারণে কবরে শাস্তি পেতে হবে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রস্রাবের কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কবরে আজাব হয়ে থাকে। অতএব তোমরা যথাযথভাবে পবিত্রতা অর্জন করো।’ (তাবারানি, হাদিস: ১১১০৪)
এ ছাড়া সুদ ও ঘুষ খাওয়া, ঋণ পরিশোধ না করা, জিনা বা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া, মিথ্যা কথা বলা, হারাম গান-বাজনা করা এবং তা শ্রবণ করা, বিক্রি করার সময় ওজনে কম দেওয়া এবং ক্রয় করার সময় বেশি নেওয়া, উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারামের পার্থক্য না করা ও পশুপাখি তথা প্রাণিকুলের ওপর দয়া প্রদর্শন না করার কারণে কবরে আজাব হবে।